Digha Jagannath Temple Facts ︱দীঘা জগন্নাথ মন্দির সম্পর্কে জানুন এই দশটি অজানা তথ্য

Digha Jagannath Temple view – Replica of Puri Temple built with pink sandstone


নিউজ অফবিট ডিজিটাল ডেস্কঃ আজ ৩০ এপ্রিল সর্বসাধারণের জন্য খুলে যাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত দীঘা জগন্নাথ মন্দিরের দ্বার। পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ হিসেবে এই মন্দির ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে সারা রাজ্যজুড়ে। সাগরপাড়ে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অনুকরণে নির্মিত এই স্থাপত্য ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি ভ্রমণপ্রেমীদের কাছেও এক দারুণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। আসুন, জেনে নিই দীঘা জগন্নাথ মন্দির সম্পর্কে দশটি চমকপ্রদ তথ্য— 

১. পুরীর সঙ্গে মিল, কিন্তু একাধিক অভিনব পার্থক্যঃ এই মন্দিরটি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অনুকরণে নির্মিত হলেও এখানে দেবতাদের মূর্তি কাঠের নয়, প্রস্তরের তৈরি। তবে রথযাত্রার সময় কাঠের মূর্তির ব্যবহার হবে। এছাড়া পুরোনো দীঘা মন্দিরকে ‘মাসির বাড়ি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে রথযাত্রা শেষ হবে—যা পুরীর ‘গুন্ডিচা মন্দির’ রীতির অনুরূপ।

২. প্রাচীন কাহিনির সূত্র ধরে শুরু নতুন ইতিহাসঃ অনেকের অজানা, এই বিশাল মন্দিরের পেছনে রয়েছে এক আশ্চর্য ঘটনা। ১৪১৩ বঙ্গাব্দে, ৬ই চৈত্র এক বুধবার সন্ধ্যায় সমুদ্র থেকে ভেসে আসে তিনটি মূর্তি—জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। স্থানীয় মৎস্যজীবী ও সমীর মণ্ডলের মতো ভক্তরা সেই মূর্তিগুলিকে উদ্ধার করে পূজার আয়োজন করেন। সেই স্থানেই গড়ে ওঠে দীঘার আদি জগন্নাথ মন্দির, যার ইতিহাস আজও একটি বিশাল হোর্ডিংয়ে তুলে ধরা হয়েছে।

৩. চারটি প্রধান অংশে বিভক্ত মন্দিরঃ এই মন্দিরের স্থাপত্য কাঠামো বিভক্ত চারটি ভাগে—ভিমানা (গর্ভগৃহ), জগমোহন (সমাবেশ হল), নাটমন্দির (নৃত্যগৃহ), এবং ভোগমণ্ডপ (ভোগ নিবেদন হল)। প্রতিটি অংশই বৈদিক স্থাপত্যের ঐতিহ্য বজায় রেখে গড়ে তোলা হয়েছে।

৪. কল্পনার রূপ পেল বাস্তবেঃ ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর, ওল্ড দীঘা থেকে নিউ দীঘা হাঁটতে হাঁটতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ একটি ছোট্ট জগন্নাথ মন্দির দেখে অনুপ্রাণিত হন। সেদিনই ঘোষণা করেন পুরীর আদলে এক বিশাল মন্দির নির্মাণ হবে দীঘায়। ছ’বছর পর, প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ করে সেই স্বপ্ন বাস্তব হল।

৫. রাজকীয় নির্মাণশৈলী ও ৩৬ মাসের নিরলস পরিশ্রমঃ মন্দিরটি তৈরি হয়েছে ৩ লক্ষ ঘনফুটেরও বেশি বানসি পাহাড়পুরের গোলাপি বালুকাপাথর দিয়ে। ৩,০০০ কর্মী একটানা ৩৬ মাস ধরে দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করেছেন এই গঠনতন্ত্র। পাশাপাশি, আশেপাশে লাগানো হয়েছে ৫০০-র বেশি গাছ ও তৈরি হয়েছে থিম-ভিত্তিক লন, যা দর্শনার্থীদের প্রশান্তি দেবে।

৬. ধর্মনিরপেক্ষতার এক অনন্য নজিরঃ পুরীর মূল মন্দিরে যেখানে অ-হিন্দুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, সেখানে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে সব ধর্মের মানুষের প্রবেশাধিকার থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছেন—“ধর্ম কেবল প্রচারের বিষয় নয়, তা হৃদয়ে ধারণ করার বিষয়।”

৭. পুরীর 'মহাপ্রসাদ' এখানেও, তবে ভিন্ন আঙ্গিকেঃ যদিও পুরীর মন্দিরের মতো এখানে মহাপ্রসাদ রান্না হবে, তবু পুরীর ‘সুয়ারা মহাসুয়ারা নিজোগ’-এর সদস্যরা এতে যুক্ত হবেন না। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন—তাঁদের নিজস্ব ঐতিহ্যিক রান্না পদ্ধতি কেবল পুরী মন্দিরেই সীমাবদ্ধ থাকবে। দীঘায় স্থানীয় পুরোহিতরাই ভোগ প্রস্তুত করবেন।

৮. প্রশাসন ও আধ্যাত্মিকতার যুগলবন্দিঃ এই প্রকল্পের দায়িত্বে ছিল HIDCO (Housing Infrastructure Development Corporation)। তবে প্রতিদিনের ধর্মীয় কার্যকলাপ পরিচালনা করবে ISKCON, যার মাধ্যমে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটবে।

৯. ২১৩ ফুট উঁচু, দৃষ্টিনন্দন ও প্রতিমার ‘রত্নবেদি’ অনুরূপঃ মন্দিরটির উচ্চতা ২১৩ ফুট, যা প্রায় পুরীর মন্দিরের সমতুল। প্রতিমাগুলি স্থাপিত হয়েছে ‘রত্নবেদি’-তে, যেটি পুরীর মন্দিরের আদলে নির্মিত হয়েছে। এতে ঐতিহ্যগত ক্যালিঙ্গ স্থাপত্যশৈলীর প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

১০. প্রাণপ্রতিষ্ঠা ও পতাকা উত্তোলনের মাহেন্দ্রক্ষণঃ মন্দিরের শিখরে ঐতিহ্য মেনে উঠেছে পতাকা, যা প্রতি দিন নিয়ম করে বদলানো হবে পুরীর মতই। দইতি সম্প্রদায়ের সহায়তায় সম্পন্ন হয়েছে প্রাণপ্রতিষ্ঠার পবিত্র আচার, যা গোটা রাজ্যে আধ্যাত্মিক আবহ তৈরি করেছে।

এইভাবেই দীঘা জগন্নাথ মন্দির হয়ে উঠেছে শুধু একটি ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, বরং ইতিহাস, বিশ্বাস ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির এক যুগান্তকারী নিদর্শন। আপনি যখন দীঘায় যাবেন, এই মন্দিরে একবার অবশ্যই ঘুরে আসুন—শুধু দর্শন নয়, অনুভব করতে পারবেন অতীত ও বর্তমানের এক অনন্য সেতুবন্ধন।


#DighaJagannathTemple #JagannathDhamDigha #DighaTourism #NewTempleDigha #PuriReplicaTemple #MamataBanerjeeProject #HIDCO #ISKCONDigha #JagannathCulture #UnknownTempleFacts

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন