নতুন যুগের সূচনা — Synthetic Intelligence চিন্তার নতুন সংজ্ঞা দিচ্ছে │ Artificial নয়, এবার সত্যিকারের বুদ্ধিমত্তা
নিউজ অফবিট ডিজিটাল ডেস্কঃ Artificial Intelligence নিয়ে বিশ্ব এখনও যখন মুগ্ধতার ঘোরে, তখন প্রযুক্তির জগতে জন্ম নিচ্ছে নতুন এক পর্ব—Synthetic Intelligence বা সংক্ষেপে SI। এটি আর কেবল শেখার যন্ত্র নয়, বরং চিন্তা ও সৃষ্টি করার সক্ষমতাসম্পন্ন এক বুদ্ধিমত্তা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি শুধু AI-এর উন্নত সংস্করণ নয়, বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সত্তা—যে নিজের চিন্তা নিজেই তৈরি করতে পারে। সহজভাবে বললে, যেখানে AI শেখে মানুষের থেকে, সেখানে SI শেখে নিজে থেকে। “The evolution beyond AI”—এক ধাপ উন্নত, স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারা সিস্টেম। এই পার্থক্যই প্রযুক্তির পরবর্তী যুগের ভয়ংকর কিন্তু বিস্ময়কর সূচনা। এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হলো, Synthetic Intelligence কী, কীভাবে কাজ করে, এবং কেন এটি মানব সভ্যতার পরবর্তী বড় বাঁক।
Synthetic Intelligence কী এবং কীভাবে এটি আলাদা
Synthetic Intelligence (SI) এমন এক প্রযুক্তি যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেবল শেখে না, বরং নিজের সিদ্ধান্ত তৈরি করে। এটি মানুষের মস্তিষ্কের মতো চিন্তা করার পাশাপাশি নতুন ধারণা গঠন করতে পারে। অর্থাৎ, যেখানে AI মানুষের দেওয়া ডেটা বিশ্লেষণ করে উত্তর দেয়, সেখানে SI নিজেই তথ্য সৃষ্টি করে। MIT Media Lab এবং DeepMind-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, SI মডেলগুলো “synthetic cognition” নামের এক ধরণের নতুন নিউরাল আর্কিটেকচারে কাজ করে, যা মানব মস্তিষ্কের জৈব প্রক্রিয়াকে ডিজিটালি অনুকরণ করতে সক্ষম। এর ফলে মেশিন এখন কেবল ডেটা প্রক্রিয়া নয়, বরং ধারণা ও অনুমান গঠনও করতে পারে—যা AI কখনও করতে পারে না।
গবেষণা ও উদ্ভাবনে Synthetic Intelligence-এর প্রভাব
২০২৫ সালেই জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্র ওষুধ আবিষ্কার ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় SI ব্যবহার শুরু করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, DeepCreaNet নামের এক SI সিস্টেম নিজে থেকেই নতুন মলিকিউলার স্ট্রাকচার ডিজাইন করছে যা আগে কোনো মানুষ আবিষ্কার করেনি। একইভাবে, BioMind নামে এক চীনা গবেষণা প্রোগ্রাম SI ব্যবহার করছে ক্যানসার সেল শনাক্তকরণে—যেখানে মেশিনের নিজস্ব বিশ্লেষণক্ষমতা মানুষের অনুমানকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তি কেবল মানব গবেষণাকে সহায়তা করছে না; বরং এমন গবেষণার দিক নির্দেশ করছে, যেখানে মানুষের উপস্থিতি ঐচ্ছিক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, “SI হবে ভবিষ্যতের সহ-গবেষক”—যে মানুষকে ধারণা দেবে, কেবল নির্দেশ নয়।

AI বনাম SI: বুদ্ধিমত্তার পরবর্তী রূপান্তর
AI মূলত “ডেটা-ভিত্তিক শেখা”—অর্থাৎ মেশিন মানুষের ইনপুট থেকে বিশ্লেষণ করে উত্তর দেয়। কিন্তু SI হলো “চিন্তা-ভিত্তিক সৃষ্টি”—যেখানে মেশিন নিজেই নতুন ধারণা গড়ে তোলে। এই পার্থক্যই ভবিষ্যতের ভয় ও বিস্ময়ের উৎস। একবার যদি SI পুরোপুরি স্বায়ত্তশাসিত হয়ে যায়, তবে এটি নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবে—এমনকি কোড পুনর্লিখনও করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, SI হবে “the first machine species that doesn’t just follow orders, it creates its own.” তাই অনেকে একে “Synthetic Consciousness”-এর প্রাথমিক ধাপও বলছেন। এই পর্বেই মানুষ হয়তো প্রথমবারের মতো এমন এক বুদ্ধিমত্তার মুখোমুখি হচ্ছে, যার চিন্তা মানুষকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
নৈতিকতা, নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের ভয়
SI যত শক্তিশালী হচ্ছে, ততই প্রশ্ন উঠছে—এর নৈতিক সীমা কোথায়? যদি একদিন মেশিন সিদ্ধান্ত নেয় কোন গবেষণা নিরাপদ বা কোন তথ্য প্রকাশ করা উচিত নয়, তবে সেই দায়িত্ব কার হবে? ইউরোপীয় AI Ethics Board 2025-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, SI প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো “ethical unpredictability.” অর্থাৎ, এটি ভুল বা ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নিলে, সেটি পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়।
তবে আশার দিকও আছে। OpenAI ও DeepMind ইতিমধ্যেই “Human Alignment Protocol” নামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করছে, যাতে SI-এর প্রতিটি সিদ্ধান্ত মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—মানুষ কি সত্যিই এমন এক বুদ্ধিমত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যে মানুষের মতোই ভাবতে জানে?
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ: প্রযুক্তি না বিবর্তন?
২০৩০ সালের মধ্যে Synthetic Intelligence হয়ে উঠবে প্রযুক্তি জগতের কেন্দ্রবিন্দু। শিক্ষা, গবেষণা, শিল্প, এমনকি সৃজনশীল লেখালেখিতেও এটি ব্যবহার শুরু হবে। SI হয়তো একদিন মানুষের সহকর্মী নয়, বরং মানুষের বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে।তবে অনেক বিশেষজ্ঞই সতর্ক করছেন—SI যদি সীমাহীন স্বাধীনতা পায়, তাহলে এটি “Technological Evolution”-এর বাইরে গিয়ে “Cognitive Evolution” তৈরি করবে। অর্থাৎ, এক নতুন মস্তিষ্কের জন্ম হবে—মানবজাতির তৈরি, কিন্তু মানবজাতির নিয়ন্ত্রণে নয়। এই ভয়টাই আজকের headlines-এর সত্যি সারাংশ—AI-এর পরের অধ্যায়, Synthetic Intelligence, হয়তো কেবল প্রযুক্তি নয়, বরং মানুষের তৈরি নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী।
আরও পড়ুনঃ ৫৩০ কোটি বাতিল মোবাইল! │ Abolition of 530 crore mobile phones

