'রোদ্দুরের কথকতা’- নিকোনো উঠোনে বসন্ত এসেছে

সময় বদলায়। বদলাবেই। নিয়নের আলো ফিকে হয়ে এলইডি'র উজ্জলতায়। স্মার্টফোন মাপে রক্তচাপ। মুহূর্তগুলো বন্দি আজ আঙুলের ছোঁয়ায়। তবু ছুটির দিনে ক্লান্ত দুপুরে ভাতঘুম মন। শিরিষ গাছের দীর্ঘ ছায়া আড়মোড়া ভাঙে তপ্ত ছাদে। আর মন কেমন করা রবিবার দুপুরে মজে থাকে 'রোদ্দুরের কথকতা'। 

কলমে-দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়


মাদের চারদিকে ঘোরলাগা হাওয়া। অনন্তের  পথযাত্রী ভক্তদল যেরকম নিবেদিত প্রাণ লক্ষ্যে অবিচল। সেই রকম আমাদের অবস্থা। অনন্যমনা মুখে বৈরাগ্যের ছবি। ভিতরে মধুলোভী প্রাণ সর্বদা করে আনচান। কেন এসেছি কোন দিকে যাচ্ছি, কি বা কাজ কিছুই জানা নেই। দৃষ্টির মধ্যে একটা ডিমে তা দেওয়া ভাব। কোনো এক নৈঃশব্দ্যকে ছুঁতে গিয়ে ঝমঝমে আলোকবৃত্তের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। আমাদের তকতকে নিকোনো উঠানে রোদ্দুরের ভাগ কিছু বেশি। কিছু না কিছু ফুল ফুটে আছেই। মৌমাছিদের নিত্য আনাগোনা। কিছু ঘাস এখনও বেঁচে আছে। সব কংক্রিট হয়ে যায়নি।
এখনও শিশির পড়ে। গলার ব্যথায়, ঘুসঘুসে কাশিতে টের পাই ঠাণ্ডা এখনও যায়নি। এই দিকে তাকিয়ে একটা গোটা দুপুর বেমালুম কেটে গেল। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ মনে পড়ে গেল, যে অসম্ভব মেধাবী বন্ধুটা পাগল হয়ে গেছে হুট করে- চকমিলানো দালানবাড়ি ফেলে রেখে হাফ প্যান্ট পড়ে গায়ে চাদর দিয়ে হাতে লাঠি নিয়ে হুটহাট করতে করতে পাড়া বেড়াচ্ছে। দেখা হলে বলে ‘দাদা কেমন আছ?’ কি রে কোথায় যাচ্ছিস, জিগ্যেস করলে বলে- ‘আর বোলোনা একটা ইন্টারভিউ আছে, কাগজপত্র এটেস্টেট করাতে বিকাশভবন যাচ্ছি।' এই বলে একশ সতেরো কিলোমিটার দূরত্ব সামনে নিয়ে ভুল সময়ে ভুল ট্রেনে ভুল লক্ষ্যে ঠিকঠাক সময়ের কিছু মূল্যবান কাগজ নিয়ে উঠে পড়ল। এ যে কি ভানুমতীর খেল কে জানে।
সব সম্মাননা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে ঘাস পাখি পোকাদের গায়ে গায়ে কী অলৌকিক যাপন। বসন্ত আসছে। তবে গুটি কী চিকেন আমি বুঝতে পারি না। এই রকমই কোনো এক বসন্ত দিনে আমের বোল ধরার ম ম গন্ধের মধ্যে সব পাগলেরা জড়ো হয়েছিল শান্তিনিকেতনে।সারাগায়ে রঙিন আবীর মেখে উদাসীন সন্ন্যাসীর মতো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বসে আছেন।জ্যোৎস্নার উৎসবে ভেসে যাওয়া সেই সব দিনকাল রূপকথার মতো অমর হয়ে আছে। ধূলি ধূসরিত সেই পথে হেঁটে যেতে বড় সাধ হয়।
এখন পাঁচিলে ঢেকেছে দৃষ্টি। দিগন্ত আর আগের মতো স্পষ্ট প্রতীয়মান নয়। তবু মনের জানালায় চোখ পেতে রাখি। কত মানুষের যাতায়াত অবাক বিস্মিত করে। এই ভেবে যে এইসব ঝরাপাতাদের গানও শোনা হল। এখন পৃথিবীর কয়েকজন লোক বেশিরভাগ সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। আর বাকি এত অংশটা এক আনন্দময় উদাসীনতায় দিন কাটায়।  পেয়েও কত মানুষের বুকে কত ব্যথা জমে আছে। আহা রাজা যদি সিংহাসন ছেড়ে খোলা মাঠে হাওয়া খেত। নিজের নিজের ব্যাঙের আধুলি ফেলে, বেয়ান যদি দুহাত তুলে নাচা যেত। কী ভালোটাই না হতো গো।
গুরু বললেন, চরণচিহ্ন ধরে হেঁটে যাও। এই পথে মহাজনী নৌকা গেছে। আমাদের আর কী। নতুন প্রজন্ম আসছে। তাদের নিত্যনতুন আদবকায়দা, ভাবনা, ধরনধারণ। তাদের সঙ্গে আমাদের মিলবে কেন হে? তার চেয়ে ভাল গুরু স্মরণ করে এগিয়ে যাই। চন্দন কাঠের বনের দেখা না পেলে থামা নেই। মেঘ রোদ্দুরের খেলা সারাজীবন জুড়ে। ওজোনস্তরের অত ভাল ছাতাটাও ফুটো করে ফেলেছি। সে যা হোক। গরীব মানুষের ছাতা ওরকম হয়। তাই বলে কি সারাতে নেই। চলো চেষ্টা করি। দু চারটে বন্ধু গাছ অন্তত সঙ্গে থাকুক ।।




1/Post a Comment/Comments

Unknown বলেছেন…
আহা,যেন রোদেলা মাঠে চঞ্চল খরগোশের খুনসুটি।
আর আমাকে দেখো,৮০°c তাপমাত্রায় ঝিমোতে থাকা চক্ষুপল্লবহীন সরীসৃপ!অনন্তকাল বুকে-
মাটিতে হয়ে যযাতির খিদে নিয়ে শুধু কালভক্ষন।
নবীনতর পূর্বতন